
সুদানে হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার দারফুরের এল ফাশের দখলের পর শহরের মূল হাসপাতালে হামলা চালায় আরএসএফ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানায়, মঙ্গলবার আরএসএফ সদস্যরা হাসপাতালে থাকা প্রত্যেককেই ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে রোগী, তাদের সঙ্গী কিংবা সেখানে উপস্থিত যে কেউই বাদ যায়নি।
সংস্থাটি জানায়, শহরের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো ‘মানব কসাইখানায়’ পরিণত হয়েছে। আরএসএফ চারজন ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন নার্সসহ মোট ছয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে করেছে এবং তাদের মুক্তির জন্য দেড় লাখ ডলারের বেশি মুক্তিপণ চাইছে বলে সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়।
মঙ্গলবারের এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় এল-ফাশের রেজিস্ট্যান্স কমিটিও। তারা জানায়, হত্যাযজ্ঞের পর শহরজুড়ে নেমে আসে এক ভয়াবহ নীরবতা। ১৮ মাসব্যাপী অবরোধ, অনাহার ও গোলাবর্ষণের পর রবিবার আরএসএফ শহরটি দখল করে নেয়। এটি ছিল দারফুরে সুদান সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাত শুরুর পর থেকে আরএসএফ ও এর মিত্র আরব মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অ-আরব জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ উঠেছে। যদিও আরএসএফ তা অস্বীকার করে। এল-ফাশের দখল হয়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শহরে আটকে থাকা প্রায় আড়াই লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বিবিসি ভেরিফাই বিশ্লেষিত নতুন ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, শেষ কয়েকদিনে আরএসএফ সদস্যরা নিরস্ত্র বেসামরিকদের গুলি করে হত্যা করছে। সহায়তা সংস্থাগুলোর মতে, শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। কেউ কেউ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পাশের টাওইলা শহরে পালিয়ে গিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন।
এক ব্যক্তি বিবিসি আরবিকে বলেন, শনিবার গোলাবর্ষণ এতই তীব্র ছিল যে আমাদের পালানো ছাড়া উপায় ছিল না। পথে আরএসএফ আমাদের মারধর করে, জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়, আর অনেককে ধরে মুক্তিপণ দাবি করে। কয়েকজনকে পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। জাতিসংঘের সাবেক মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা ইয়ান এগেল্যান্ড বলেন, এখানে গণহত্যার ওপর গণহত্যা হচ্ছে—অনাহার, চিকিৎসাহীনতা, মৃত্যুর মিছিল—সব মিলিয়ে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।