দেশব্যাপী তিন দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা একই সঙ্গে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
গতকাল শনিবার শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনার পর আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে তাঁরা বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শহীদ মিনার চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারী সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের দাবি বহু পুরোনো। বছরের পর বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করেছি। কিন্তু বারবার আশ্বাসের পরও বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো—
১. সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন-স্কেলে দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ
২. শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা
৩. চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। এর আগে তাঁদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার আন্দোলন হয়েছিল। এবার সেই দাবি আরও এক ধাপ এগিয়ে দশম গ্রেড দাবি করছেন শিক্ষকরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক শুমারি (এপিএসসি) অনুযায়ী দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি সব মিলে প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি, যার মধ্যে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন-গ্রেড ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়। এর প্রেক্ষিতে সারা দেশের প্রধান শিক্ষকদের বেতন-গ্রেড ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১১তম করার বিষয়েও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, তাঁরা সরাসরি ১০ম গ্রেড ছাড়া অন্য কোনো সমাধান মানবেন না।
পাঠদান বন্ধ থাকায় দেশের বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে আজ বঞ্চিত হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, “শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করতেই হবে।”
সরকার ও আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, তা এখনো জানা যায়নি। তবে পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রাথমিক শিক্ষায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন।