রাজধানীর পুরান ঢাকায় আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন হত্যা মামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পেশাদার ভাড়াটে শুটার রুবেল ও ইব্রাহিম, যারা সরাসরি মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। ভারত পালিয়ে যাওয়ার আগে সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি বলেন, রাজধানীর সূত্রাপুরে চাঞ্চল্যকর মামুন হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি পিস্তল উদ্ধারসহ দুই শুটার ও তাদের সহযোগী মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।
এর আগে সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয়।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে মামুন দৌড়ে হাসপাতালের ফটকের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তখন পেছন থেকে দুই অস্ত্রধারী তার দিকে একাধিক গুলি ছোড়ে। খুব কাছ থেকে চালানো এই হামলায় মুহূর্তের মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মামুন। গুলি ছোড়ার পর শুটাররা অস্ত্র কোমরে গুঁজে দ্রুত পাশের গলি দিয়ে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় মামুনকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে জানা গেছে, মামুনের শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন ছিল। মাথার নিচে একটি, বাম পিঠে একটি, বুকের ডান পাশে একটি, বাম কব্জিতে একটি এবং ডান কব্জির ওপর দুটি গুলি লাগে।
পুলিশ জানায়, নিহত তারিক সাইফ মামুন রাজধানীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি ‘ইমন মামুন গ্রুপের’ অন্যতম প্রধান ছিলেন এবং একসময় কুখ্যাত সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইমন ও মামুনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারেন। ১৯৯৭ সালে মোহাম্মদপুরে জোসেফের ভাই টিপু হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ছিলেন মামুন, যা থেকে পুরনো শত্রুতার জেরে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন তিনি।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের নামও জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।