
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সামনেও যে এটার সম্ভাবনা নাই তাও বলছি না। তবে যারা নির্বাচনকে বানচাল করার, প্রতিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, তারা ব্যর্থ হবে।’রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে ইসির বিশেষ বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের একটা ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। সেটা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলা। এটা নিয়ে বিশাল আলোচনা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা আর বিস্তারিত বলছি না। ওখানে সেখানকার আভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছি। যেগুলোর সঙ্গে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘দুটো উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতন প্রচেষ্টা হয়েছে। আমরা এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। সামনেও যে এমন সম্ভাবনা নাই তাও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য যাতে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয়। যদি ঘটে তারা যেন ধরা পড়ে।’ ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘যেখানে যতটুক দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন সব বাহিনী ততটুক দৃঢ় হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। নির্বাচন নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই।’
বৈঠকে ইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে অধিক সংখ্যায় চেকপোস্ট বসানোর কথা বলেছে উল্লেখ করে সানাউল্লাহ বলেন, ‘অধিক সংখ্যায় চেকপয়েন্ট বসিয়ে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম লিমিট করা, তাদের চলাচলকে লিমিট করা, যেসব সন্ত্রাসীরা এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা, অবৈধ অস্ত্রসহ গোলাবারুদ যেগুলো আছে তা উদ্ধার করা। অবৈধ অস্ত্রসহ গোলাবারুদ, বাইরে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র গোলাবারুদের ব্যাপারে অভিযান চালানো; এসব জায়গাতে আরও অধিকতর কাজ করার অবকাশ আছে সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে গতকাল থেকে “রেবেলহান্ট” নামে যে অপারেশনটা প্রথমে হয়েছিল তার দ্বিতীয় ফেজ গতকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে। এটা সমন্বিতভাবে চলবে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনীর গোয়েন্দা উপাত্ত যাতে করে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বর্ডার অঞ্চলসহ দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা এবং সেই বর্ডার এলাকায় যে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে যেটার সঙ্গে বৃহত্তর কোনও ঘটনার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না সেটাও ক্ষতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা অবগত আছি, অবহিত আছি, সতর্ক আছি। মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অক্টিভলি কাজ করছে, মাঠ পর্যায়ে চোরাগোপ্তা হামলার যে ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে ঘটেছে সেগুলোর স্বরূপ নিরূপণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘তদুপরি একটি কথা বলা দরকার যে যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, আমাদের বন্ধু সেজে তাদের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল-ব্যক্তি যারা আছেন এখন মাঠে। কারণ এই ঘটনাটা আমাদের একটা চোখ খুলে দেয়।’
নির্বাচনী তফসিলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনা ঘটলো, এটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি-না জানতে চাইলে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘যারা এই কাজটা করতে চাচ্ছে, তারা চাচ্ছে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করার। সেটা ডিফাই করার জন্যই আজকের এই মিটিং।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন তো ধরেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন যেকোনও ঘটনার একটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নির্বাচনের ওপর থাকবেই। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এবং স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও কিন্তু নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে। সুতরাং সেটাও আমাদের আমলে নিতে হচ্ছে।’
ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনাদের আবারও বলি, কোনও পরিবেশেই কোনও পরিস্থিতি পৃথিবীর কোথাও সকল সিচুয়েশনকে জিরো আপনি করে ফেলতে পারবেন না। কিন্তু দেখতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে নাকি করছে না।’