
পঞ্চগড়ে অপুলেন্ট ই কমার্স নামের একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যকে ঔষধ হিসেবে বিক্রি করে প্রতারণার হাট বসিয়েছে একদল প্রতারক। অভিযোগ রয়েছে এ প্রতারক চক্রটি এমএলএম (ডেসটিনি) সিস্টেম ব্যবহার করে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কর্মীদের মডিফাই করে।
চক্রটি ভারতীয় ঔষধ বলে জেলার সহজ সরল অসুস্থ্য মানুষকে জিম্মি করে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ঔষধ হিসেবে উচ্চ দামের এসব পণ্য সেবন করে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা.মিজানুর রহমান।
জানা যায়, পুরো চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করছে বানিয়াপট্টি এলাকার রায় হোমিও হলের চিকিৎসক সত্যেন্দ্র নাথ রায়। তিনি ব্যারিষ্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার কলেজের প্রভাষকও। অভিযোগ রয়েছে এর আগেও এই চিকিৎসক অনপেসিভ নামের একটি কোম্পানির নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যগুলো কালো বাজার বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ,ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যটিকে ঔষধ হিসেবে ব্যাপক প্রচার করছে। জন্ডিসের ওষুধ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, লিভার, হাড়ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তি, জ্বর, কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, কোলেস্টেরল, ওজন কমানো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে। নতুন সব রোগীকে দেওয়া হয় অল ইন ওয়ান নামের একটি বোতল। বোতলের দাম নেয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বোতলের গায়ে কোন মূল্য নাই।
সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষকে হোমিও চিকিৎসকের কর্মচারী রেজাউল, রোগীকে জিম্মি করার জন্য কর্মীদের মডিফাইড করে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেন। এতে লাভের আশায় চক্রটি ফায়দা নিতে হোমিও চিকিৎসককে প্রচার করছে ভারতীয় ডাক্তার, ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যকে ভারতীয় ঔষধ হিসেবে। হোমিও চিকিৎসক সত্যেন্দ্র নাথ রায় ভারতীয় ডা.হিসেবে রোগি দেখেন।
বোদা অফিসে সোমবার দুপুর ২ টা থেকে ৫ টা, ভাউলাগঞ্জ অফিসে মাসের প্রথম ও শেষ বুধবার।চক্রটিতে জড়িয়ে পড়ছে বেকার যুবক যুবতি, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও চাকুরিজীবিরা। কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ডায়াগনস্টিকের যেকোন রিপোর্ট দেখেন কর্মচারী রেজাউল করিম। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে, এখানে আসা একাধিক নারীর সাথে অশ্লীল ভিডিও চেটিং এর।
হাড়িভাসা এলাকার নিরলা রায় বলেন,তার পেটে পাথর হয়েছে।স্থানীয় শহিদুল নামের এক বয়স্ক লোকের মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসে। ১১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে দেড় মাস ঔষধ খেয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। পরে আরো ৫ মাস ঔষধ খেতে বলেছেন তারা।
মোহাম্মদ আলী বলেন তার কোমরে ব্যাথা লোকের কথায় বিশ্বাস করে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ঔষধ নিয়ে কোন কাজ হয়নি।
এমদাদুল হক নামের আরেক ব্যক্তি বলেন তার পায়ের ব্যাথা সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে এক বোতল ঔষধ খেয়ে সাড়েনি।পরে আবার আরেকটা নিয়েছি তবে মনে হয়না সেরে যাবে। একই অবস্থাই আব্দুল জব্বার, শাহজাহান, রবিসহ আরো একাধিক ভুক্তভোগী।
অভিযুক্ত হোমিও চিকিৎসক সত্যেন্দ্র নাথ রায় জানান, ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যকে ঔষধ, চিকিৎসককে ডাক্তার না বলতে, তার লোকজন সবাইকে সতর্ক করার আশ্বাস দেন তিনি।