পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটির বিরুদ্ধে ভুয়া খরচ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে। এ কমিটি টাকার বিনিময়ে লুটপাটের ঘটনা হালাল করার জন্য মিনিষ্ট্র অডিট করে তার বৈধতা নিয়েছে। এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের আয় ব্যায়ের বিল ভাউচার যাচাই বাছাই করার জন্য ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বিদ্যালয়ের গোয়েন্দাদীঘির ১৮ লক্ষ টাকার লিজের রেজুলেশন ও ব্যাংকে টাকা জমার তারিখ ও খরচের বিবরনী দেখাতে বললে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন বিগত কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান ও প্রধান শিক্ষক খরচ করেছেন। কোন খাতে খরচ করেছেন বললে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট, স্কুল ঘর মেরামত ও বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট করা হয়েছে। অথচ এসব খরচের কোন বিল, ভাউচার নাই। এলাকাবাসির ধারনা ভুয়া খরচ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠে কোন মাটি ভরাট করা হয়নি। যার কারনে বর্ষার সময় পুরো মাঠ পানির নিচে থাকে।
অভিভাবকরা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। সরকারি অনুদান হিসেবে যে ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়া হয়। সে অনুদানের টাকা ঠিকাদার খরচ করা করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। তার খরচের বিবরনী আমরা জানিনা।
বিদ্যালয়ের ব্যায়ের খাত সমুহ দেখার জন্য বিগত রেগুলার কমিটির সর্বশেষ দুইটি রেজুলেশনের ফটোকপি চাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তিনি বলেন এটা গোপনীয় বিষয়।
বিদ্যালয়ের রিপিয়ারিং করার সময় পুরাতন টিন, কাঠ ও অন্যান্য মালামাল ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সে টাকাও হাতে রয়েছে।
ছাত্র ছাত্রী যারা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে ও তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী প্রতি ২শ টাকা করে নেয়া হয় সনদ নেয়ার সময়। অথচ ফরম পুরনের সময়ই তাদের সনদের টাকা নেয়া হয়েছে। এ টাকা নেয়ার সময় কোন রশিদ দেয়া হয়না বিদ্যালয়ের মার্কেটে প্রায় ১৪৭ টি দোকান হতে ভাড়া বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা আদায় হলেও তা ব্যাংকে জমা করা হয় কিনা জানা যায়নি।
বিদ্যালয়ের মার্কেটের পূর্ব পাশের দোকানগুলোর পিছনে বর্ধিত অংশ ১৭টি দোকানকে করা হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে নেয়া ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হলেও তা ব্যাংকে জমা না করে আত্বসাত করা হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় বলেন, এ টাকা আগের প্রধান শিক্ষক ধর্ম নারায়ন ও সভাপতি মশিউর রহমান নিয়েছে।
বিগত ২ বছরে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতকার্য ও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরন করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে ফরম পূরন করা হয়েছে। পূর্বের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রযেছে এমন অভিযোগ। বাড়তি টাকা রশিদ ছাড়াই আদায় করে পকেটস্থ করা হয়েছে।
বিগত ২ বছরে ৪ বার এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যার কারনে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় লুটপাট করার সুযোগ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় বলেন নির্বাচন কেন হয়নি তার কারন আগের প্রধান শিক্ষক জানেন। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
বিদ্যালয়ের মাঠের হাট বসানোর জন্য বছরে ১ লক্ষ টাকা করে ২ বছরের ভাড়া ২ লক্ষ ভাড়া আসলেও তা ব্যাংকে জমা হয়েছে কিনা প্রধান শিক্ষক জানেন না। তিনি বলেন পূর্বের কমিটি ও প্রধান শিক্ষক জানেন।
বিদ্যালয়ের সাত জন শিক্ষক শিক্ষিকা প্রাইভেট বানিজ্যে জড়িত থাকার কারনে ক্লাশে ঠিকমত পড়াশোনা হয়না। যার কারনে বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক হচ্ছেনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা দেরিতে ক্লাশে যান আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা ক্লাশ হতে বের আসেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রাইভেট বানিজ্যের কথা জানেন না বলে জানান।
কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাসিক ভাড়া প্রতি মাসে ৪ হাজার ৮শ টাকা করে বছরে প্রায় ৫৭ হাজার ৬শ টাকা আদায় করা হয়। ব্যাংকে জমা দিলেও তা উত্তোলন করে খরচ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার কারনে ও নজরদারির অভাবে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা বেলায় বিদ্যালয়ের আশেপাশে নেশা সেবন করে। তবে প্রধান শিক্ষক বলেন সন্ধ্যার পর তারা কি করে সেটা তিনি জানেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্যায়ের খাত সমুহ বললেও সে হিসাব সন্দেহজনক বলে স্থানীয়রা জানান। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে কোন রশিদ দেয়া হয়না। রশিদ ব্যবহার না করে রশিদ ছাড়া টাকা নেয়ার কারনে টাকা আত্বসাত করতে সহজ হয় বলে জানান অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের ৭শ ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে বছরে যে ২ বার পরীক্ষা নেয়া হয় সেখান হতে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ৭শ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২শ টাকা করে সেশন ফি নেয়া হয়। গড়ে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সে সব টাকারও কোন হদিস পাওয়া যায়না।
বিদ্যালয়ে ৭শ জন শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের মধ্যে থেকে প্রায় ৪ শতাধিক ছাত্রের কাছ থেকে শ্রেনী ভেদে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে বেতন নেয়া হয়। বছরে প্রায় ১৬ হাজার টাকা বেতন আদায় করা হয়। বেতনের টাকা ব্যাংকে জমা হয়না।
বিদ্যালয়ে গরীব শিক্ষার্থীদের পূর্বে বিদ্যমান থাকার পরেও বর্তমানে বেতন হাফ ফ্রি ও ফুল ফ্রি তুলে দেয় হয়েছে তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন আবেদনের প্রেক্ষিতে বেতন মওকুফ করা হয়। বিদ্যালয়ে শারীরিক কুচকাওয়াজ ও এসেমপ্লি না হওয়ায় ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাইতে পারছেনা। না গাওয়ার কারনে অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত ভুলে গেছে।
বিদ্যালয়ের ব্যাংকের চলতি হিসাব নম্বরের ২ বছরের জমা ও উত্তোলনের ব্যাংক বিবরনী চাইলেও প্রধান শিক্ষক দিতে রাজি হয়নি।