মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে চালক আব্দুর রাজ্জাকের বিরেুদ্ধে। অ্যাম্বুলেন্সটি যেন ড্রাইভারের ব্যক্তিগত গাড়িতে পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন জ্বালানি তেল বেশি যাচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে, তেমনি ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের।
মূমুর্ষ অবস্থায় রোগীদের জরুরী প্রয়োজনে অ্যাম্বলেন্স অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই অ্যাম্বুলেন্স রাখার কথা থাকলেও তা রাখা হয় ১৬ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরে। এতে জরুরী প্রয়োজনে যেমন সেবা পাচ্ছে না রোগীরা তেমনি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। সরকারী অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ম রয়েছে এবং রোগী বহন ছাড়া উপজেলার বাইরে গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সংশ্লিষ্ট কারণ থাকতে হয়। কিন্তু কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়ত অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুর রাজ্জাক মেহেরপুর শহরে তার ভাড়া বাসায় আসা-যাওয়া করেন আবার অ্যাম্বুলেন্স রেখে থেকে যান বাড়িতেই।
অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই অ্যাম্বুলেন্সের অপব্যবহার করে যাচ্ছেন ড্রাইভার রাজ্জাক। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা-যাওয়া করলেও রোগীদের কোন সমস্যা হয় না বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা চালু হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। ২০১১ সালে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন আব্দুর রাজ্জাক। যোগদানের পর থেকেই তিনি কর্মস্থলে না থেকে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন সময় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে জেলা শহরের ৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিস পাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সাথে রাত্রিযাপন করেন।
একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। সপ্তাহের প্রায় দিনই তিনি অ্যম্বুলেন্সটি রাত থেকে সকাল পর্যন্ত শহরের কাজী অফিস পাড়ায় তার ভাড়া বাসার সামনে রেখে শহরের থাকেন। বাসার সামনে জরুরী সেবার এই অ্যাম্বুলেন্স দিনের পর দিন মুজিবনগর থেকে মেহেরপুর এনে রাখায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি স্থান পাল্টিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে রাখতে শুরু করেন। বিষয়টি আবারও স্থানীয়দের নজরে আসে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রায় প্রতিদিনই দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময় তিনি অ্যাম্বেিলন্সটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতওে রাখতে দেখা গেছে। যার একাধিক ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। জরুরী সেবার এই অ্যাম্বুলেন্স এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় রেখে কিভাবে মূমুর্ষ রোগীদের সেবা দিচ্ছে তা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ড্রাইভার রাজ্জাক প্রায়ই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। কখনও রাতে আবার কখনও দিনের দীর্ঘসময় তার বাসার নিচেই অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে থাকে। অ্যাম্বুলেন্সটি যেন ড্রাইভারের ব্যক্তিগত গাড়িতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকা অথবা তাদের ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন অ্যম্বুলেন্সের অপব্যবহার করে যাচ্ছেন ড্রাইভার রাজ্জাক।
অ্যাম্বুলেন্স শহরে এনে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যেহেতু শহরে আমার পরিবার থাকে তাই রোগী আনা-নেওয়ার সময় গাড়ি রেখে কিছু কাজ সেরে চলে কমপ্লেক্সে চলে আসি। আর স্যাররা আমাকে একটু ছাড় দেয় সেজন্য শুক্রবার বা ছুটির দিনে অ্যাম্বুলেন্স মেহেরপুরে রাখি এবং আমি বাড়িতে থাকি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্বাবধায়ক ডা. মো. আসাদুজ্জামান জানান, শহরে যেহেতু তার পরিবার থাকে তাই রোগী আনা নেওয়ার সময় হয়ত দুই-এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে। প্রতিনিয়ত অ্যাম্বুলেন্স রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। এবিষয়ে তাকে জবাবদিহিতা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।