সূর্যের অভ্যন্তরীণ তাপীয় বিক্রিয়া এতটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে যে, তা বিজ্ঞানীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সূর্যের বিশাল বিস্ফোরণসমূহকে বলা হয় ‘এক্স-শ্রেণির সৌরশিখা’, যা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর বিস্ফোরণের মধ্যে পড়ে। এই শিখাগুলোর উৎস সূর্যের একটি বৃহৎ ও অতিসক্রিয় কালো দাগ সানস্পট, যা বর্তমানে পৃথিবীর দিকে মুখ করে রয়েছে।
১৩ মে সূর্য থেকে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে এক্স-১.২ মাত্রার একটি সৌরশিখা নির্গত হয়। পরদিন একই স্থান থেকে আরও শক্তিশালী এক্স-২.৭ মাত্রার শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রেডিও সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সৌরঝড়ের প্রভাব ও ঝুঁকি
এ ধরনের সৌর অগ্ন্যুৎপাত, যাকে ‘করোনাল মাস নির্গমন’ বলা হয়, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাত হানলে ভয়াবহ পরিণতি ঘটতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
এই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৮ মে ২০২৪ তারিখে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে একটি বিশেষ মহড়ার আয়োজন করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘মহাকাশ আবহাওয়া প্রস্তুতি মহড়া’। এই মহড়ায় অংশ নেয়-
মহড়ায় এমন একটি কল্পিত দৃশ্যের চর্চা করা হয়, যাতে ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে এক বিশাল সৌরঝড়ে পুরো আমেরিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিল—জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে, ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে এবং বিভিন্ন জরুরি সেবা বিচ্ছিন্ন হলে কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, বাস্তবেও যদি এ ধরনের সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানে, তবে তার প্রভাব হতে পারে চরম বিপর্যয়কর। বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, পরিবহণ, অর্থনীতি-সবকিছুই বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। তাই এ ধরনের মহড়ার মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতা তৈরি করা জরুরি, যাতে বাস্তব সংকটে পড়লে তড়িৎ ও সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের প্রবল আশঙ্কা, এর ফলে কিছু ক্ষণের জন্য হলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ মেরু, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও উত্তর মেরুর যাবতীয় রেডিয়ো যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশ্বের একাংশের বিদ্যুৎসংযোগ ব্যবস্থাও।
ক্ষতির ধাক্কা সইতে হতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশগুলোকেও। এর ফলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে উপগ্রহের মাধ্যমে জিপিএস ব্যবস্থা, ভূপর্যবেক্ষণ, এমনকি মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
সূত্র: আনান্দবাজার