মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

বাংলাবান্ধা বন্দর দিয়ে আসেনি ভারতীয় ট্রাক-শ্রমিক-সিএনএফদের আন্দোলন

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড়
  • Update Time : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
  • ১৭ Time View
বাংলাবান্ধা বন্দর দিয়ে আসেনি ভারতীয় ট্রাক-শ্রমিক-সিএনএফদের আন্দোলন
বাংলাবান্ধা বন্দর দিয়ে আসেনি ভারতীয় ট্রাক-শ্রমিক-সিএনএফদের আন্দোলন

ভারতের অভ্যন্তরে ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক ও সিএনএফ সদস্যদের আন্দোলনের কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কোন ট্রাক। ভূটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথরের ট্রাক বাংলাবান্ধা বন্দরে ঢুকতে পারেনি। ভারতের নতুন এই জটিলতায় স্থবিরতা দেখা গেছে বন্ধর এলাকা জুড়ে।

সোমবার (১৬ জুন) সকাল থেকে এ অবস্থা দেখা গেছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এতে ইয়ার্ড জুড়ে যেমন গাড়ি শূন্য অবস্থায় ছিল। তেমনি ভারতের এমন জটিলতায় দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অবসর সময় অতিক্রম করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, ঈদের ১০ দিন সরকারি ছুটি শেষে ১৫ জুন রবিবার থেকে আবারও সচল হয়েছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। চালুর প্রথম দিনে ভূটান থেকে ২০টি ট্রাকে বোল্ডার পাথর আমদানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে নেপালে ১১টি ট্রাকে পাট রপ্তানি করা হয় এ বন্দর দিয়ে।

তবে পুরোপুরি কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দিনে নতুন এক জটিলতা তৈরি হয়েছে এ স্থলবন্দরে। ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক ও সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সদস্যদের আন্দোলনের কারনে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভুটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথরের কোন ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি।

ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছলের গত ৪ মে ৪৬ টি ভারতীয় পাথরের ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। এদিকে অতিরিক্ত দাম নেয়া ও কোয়ালিটি সম্পন্ন পাথর না দেয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরদিন ৫ মে থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। তবে স্বাভাবিক ছিল ভূটান থেকে বোল্ডার পাথর আমদানি। এদিকে সোমবার সকাল থেকে ভারতের ফুলবাড়ী ২ বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও ফুলবাড়ী এক্সপোর্টার ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ফুলবাড়ী ড্রাইভার এসোসিয়েশন এবং ফুলবাড়ী সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন নানা দাবি নিয়ে ফুলবাড়ী বন্দরের সড়কে অবস্থান নিলে আটক পরে ভূটানের ট্রাক।

খবর নিয়ে জানা গেছে ভারতের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটানের গাড়ি ফুলবাড়ী বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। ভুটান গাড়ি ফুলবাড়ী পোর্টে ড্যাম করতে হবে আর ইন্ডিয়ান গাড়িতে বাংলাদেশে মাল নিতে হবে।

এ বিষয়ে কথা হয় বন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ভারতের যে আন্দোলন এটা অযৌক্তিক আন্দোলন। আমরা যখন ভুটান থেকে আমদানি করি তখন সব ধরনের ট্যাক্স দিয়েই আমদানি করি। এদিকে ভুটানের সাথে ভারতের চুক্তি বদ্ধ আছে। কিন্তু ভারত যে দাবিটি তুলেছে ভুটান থেকে আমদানি করা মালামাল ভারতে নামিয়ে সেখান থেকে তাদের গাড়িতে বাংলাদেশে আনতে হবে এটি অযৌক্তিক। কারণ এটি হলে আমাদের খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে। এতে পাথরের দামটাও অনেকটা বেড়ে যাবে। লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। তাই আমরা ভারতের সরকারকে বলতে চাই ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে দুদিন পরপর অযৌক্তিক এমন আন্দোলন বন্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বন্দরের সিএনএফ এজেন্ট সিবরাতুল্লা বিপু ও সুমন আল মামুন বলেন, দুদিন পরপর তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করে। কিছুদিন আগে স্লট বুকিং নিয়ে আন্দোলন করেছে। দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাদ দিয়ে শুধুই তার আন্দোলন মুখী হয়ে উঠেছে। আমরা ভুটানের কাছ থেকে যেমন পাথর ক্রয় করে আমদানি করি, তেমনি ভারতেরও করতে চাই। যা আগে করা হয়েছে। মূলত তারা মাটি মিক্স করা পাথর ও অতিরিক্ত দাম নেয়। এতে আমাদের লোকসান হয়। তাই খারাপ মালামাল দেয়ায় আমরা তাদের কাছ থেকে পাথর ক্রয় করছি না। তারা যদি ভালো মানের পাথর ভুটানের মত করে দিত তাহলে আমাদের কোন আপত্তি থাকতো না। তারাই খারাপ মাল পাঠাচ্ছে এবং উল্টো নানা দাবিতে তারা আন্দোলন করে ব্যবসায়িক লোকসান সৃষ্টি করছে উভয় পাশে। আমরা চাই যেহেতু আন্তর্জাতিক বিষয় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

বন্দরের শ্রমিক নেতা বদিউজ্জামান বাবুল বলেন, এই বন্দরে দুটি শ্রমিক সংগঠনের প্রায় ১ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করে। সবাই বন্দরের উপর নির্ভরশীল। ভারত ইচ্ছাকৃত ভাবে একের পর এক কৃত্রিম সংকট ও সমস্যা তৈরি করছে। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। আমাদের দাবি দ্রুত সকল সমস্যা যেন সমাধান হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা যাতে স্বাভাবিক ভাবে সকল কার্যক্রম বন্দরে পরিচালনা করতে পারে সেজন্য উভয় দেশের সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবি।

বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের ছুটি শেষে বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমরা যেটা জেনেছি ভারতের সাথে পাথরের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ থাকলেও, এর মাঝে শুধু ভুটান থেকে পাথর আমদানি হয়ে আসছিল। আজকে শুনেছি ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে দিলে ভুটানি ট্রাক বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এমন দাবি নিয়ে ভারতে আন্দোলন চলছে। আমরা আশা করছি এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin