মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী ঘটবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • Update Time : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ৭ Time View
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী ঘটবে?
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী ঘটবে?

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পাল্টা জবাবে ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তাহলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এমন আশঙ্কায় কাঁপছে বিশ্ব। কারণ বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাস এই সংকীর্ণ সমুদ্রপথ দিয়ে সরবরাহ হয়। প্রণালিটি বন্ধ হলে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে হু-হু করে, উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন খরচ বাড়বে এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যাবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কোথায় এই হরমুজ প্রণালি?

উত্তরে ইরান ও দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঝে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য একমাত্র সমুদ্রপথ। মাত্র ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত এই জলপথ দিয়ে দৈনিক প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। যার বার্ষিক মূল্য প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। তেল শুধু ইরান থেকেই আসে না, বরং ইরাক, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও আমিরাত থেকেও পরিবহন করা হয়। এই জ্বালানি পণ্য মূলত যায় এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী ঘটবে?

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬-এর সাবেক প্রধান স্যার অ্যালেক্স ইয়ংগার সতর্ক করে বলেছেন, প্রণালি বন্ধ হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হবে এক ভয়াবহ সংকট। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরাজনীতি বিশ্লেষক বাদের আল সাইফ বলেন, তেলের দাম বাড়বে, শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দেবে।

ইরান যদি হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে চায়, তাহলে তারা ডুবো খনি বা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দ্রুতগামী নৌযান ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। তবে এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর সামরিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও তৈরি করবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ চলেছিল। তখন উভয় দেশ নিরপেক্ষ জাহাজে হামলা চালিয়েছিল। ওই সময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ কুয়েতি ট্যাংকারকে পাহারা দিয়েছিল। যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় নৌ সামরিক অভিযান।

কী প্রভাব পড়বে বিশ্বের ওপর?

ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। এর প্রায় ৯০ শতাংশ তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে যায়। ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ারও অর্ধেকের বেশি জ্বালানি এই রুটে নির্ভরশীল। ফলে কোনও ধরনের ব্যাঘাত হলে এশিয়াজুড়ে জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞ ভানদানা হারি বলেন, ইরান যদি প্রণালি বন্ধ করে, তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওদের নিজের প্রতিবেশী ও বড় বাজার চীন। তেল-নির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল সৌদি আরব, কুয়েত ও আমিরাতের জন্যও এই প্রণালি বন্ধ হওয়া হবে মারাত্মক আর্থিক ধাক্কা।

বিকল্প রুট কি আছে?

হরমুজ প্রণালির ওপর নির্ভরতা কমাতে কয়েকটি দেশ বিকল্প রুট চালু করেছে। সৌদি আরবের পূর্ব–পশ্চিম পাইপলাইন দিনে ৫০ লাখ ব্যারেল তেল বহনে সক্ষম। আমিরাত ফুজাইরাহ বন্দর পর্যন্ত পাইপলাইন বসিয়েছে, যার ক্ষমতা ১৫ লাখ ব্যারেল। ইরান নিজেও জাস্ক বন্দরের জন্য গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইন চালু করেছে, যার বর্তমান ক্ষমতা ৩.৫ লাখ ব্যারেল। তবে এসব বিকল্প রুট মিলেও দিনে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ ব্যারেল পরিবহন সম্ভব। যা হরমুজের মোট বহনের মাত্র ১৫ শতাংশ।

ইরান কি সত্যিই প্রণালি বন্ধ করবে?

ইতিহাস বলছে, ইরান বহুবার হুমকি দিলেও কখনোই হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করেনি। কিন্তু এবারের সংকট ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পাল্টা জবাব নিয়ে চাপ বেড়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা ইরানের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার শামিল হবে। তিনি চীনকে এই ব্যাপারে মধ্যস্থতার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, চীন তেলের দাম বৃদ্ধিতে আগ্রহী নয় এবং ইরানের রাশ টানতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin