পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাতে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রদেশটির একাধিক জেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪ ঘণ্টা ২৯০ জন আহত হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (পিএমডি) সোমবার জানিয়েছে, সারাদেশে ১৭ জুলাই পর্যন্ত বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, অধিকাংশ প্রাণহানি ঘটেছে ভবন ধসে চাপা পড়ে। বাকিরা মারা গেছেন পানিতে ডুবে বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘লাহোরে অন্তত ১৫ জন, ফয়সালাবাদে ৯ জন, সাহিওয়ালে ৫ জন, পাকপত্তনে ৩ জন এবং ওকারায় ৯ জন নিহত হয়েছে।’ নিহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
জনসাধারণকে ঘরে রাখার জন্য রাজধানী ইসলামাবাদের পাশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর আশপাশে বসবাসরতদের সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে পাঞ্জাবের বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে এবং বহু ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে। সর্বশেষ এই প্রাণহানির ফলে জুনের শেষদিকে মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ জনে। নিহতদের অর্ধেকের বেশি শিশু।
বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ জানান, কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করছে। তিনি জনগণকে নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
প্রদেশের চাকওয়ালে গত একদিনে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, উদ্ধার নৌকাগুলো বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে সামরিক হেলিকপ্টারগুলোও বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে চক্কর দিচ্ছে।
পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আরও বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। প্রদেশজুড়ে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
২৫ কোটির কাছাকাছি জনসংখ্যার পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-সংবেদনশীল দেশ। দেশটিতে মূলত দুটি প্রধান আবহাওয়া বিরাজ করে। একটি চরম তাপমাত্রা ও খরা, অন্যটি মৌসুমি বৃষ্টি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তানের প্রভাবে পাকিস্তানের ১৩ হাজারেরও বেশি হিমবাহ এখন দ্রুত হারে গলছে।
২০২২ সালে মৌসুমি বৃষ্টিপাতে দেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং এক হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়। এতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানকে সহায়তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্বিগুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।