রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিদ্ধস্তে আহত মাহিয়া তাসনিম (১৩) মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। চুয়াডাঙ্গা জেলার কুড়ালগাছি গ্রামের মৃত ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ বিশ্বাসের মেয়ে ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া তাসনিম রাজধানীর উত্তরায় মা আফরোজা খাতুনের সঙ্গে বসবাস করত। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে গুরুতর দগ্ধ হয় মাহিয়া। দুর্ঘটনায় তার শরীরের প্রায় ৫০% পুড়ে যায়।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার মরদেহ প্রথমে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলার তাদের নিজ বাড়ি কুড়াালগাছি গ্রামে। এরপর শুক্রবার সকালে তার মরদেহ নেওয়া হয় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে।
প্রকৌশলী স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ সুখে ছিলেন মা আফরোজা খাতুন। ৬ বছর আগে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে স্বামী চলে গেছেন দুই সন্তানকে মানুষ করার ভার দিয়ে। কিন্তু আফরোজা পারলেন না ধরে রাখতে তার আদরের বড় মেয়ে মাহিয়াকে। মাইলস্টোনে বিমান বিদ্ধস্ত হয়ে কেড়ে নিল তার বড় মেয়ে মাহিয়াকে। স্বামী চলে যাওয়ার শোক কাটতে না কাটতেই সন্তান হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন মা আফরোজা খাতুন।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে আফরোজা খাতুনের সাথে চুয়াডাঙ্গার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ বিশ্বাসের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই কাটছিলো। ২০১৯ সালে স্বপরিবারে দুবাইয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ। স্বপ্ন ছিল বড় মেয়েকে নিজের মত বুয়েট প্রকৌশলী বানাবেন। স্বামীর মৃত্যুতে দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আফরোজা। স্বামীর অপূর্ণ আশা পূরণ করতেই বড় মেয়ে মাহিয়াকে মাইলস্টনে ভর্তি করান। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী মাহিয়া এগিয়ে যাচ্ছিল লক্ষ্যের দিকে।
দুই মেয়েকে আঁকড়ে ধরে স্বামীর শোক ভুলতে চাইছিলেন আফরোজা। কিন্তু নিয়তি বড়ই নির্মম। মেধাবী মাহিয়া সেদিন কোচিং করতে শ্রেণীকক্ষে ছিল। বিমান দুর্ঘটনায় তার শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। বেশ কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বুধবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই মেয়েকে হারানোর অশনি সংকেতে পাগল প্রায় মা আফরোজা। আত্মীয়-স্বজনরাও এই শোকে বাকরুদ্ধ। এ অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার দায় কেউ নেবে না তাই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্বজনদের অনেকেই।
আফরোজার বাবার বাড়ি মুজিবনগরের জয়পুর গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তার মেয়েকে। শুক্রবার সকালে মরদেহ এসে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এমন মৃত্যু আর যেন দেখতে না হয় সেই প্রত্যাশা স্বজনদের।