প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে হামাসের নিন্দা ও নিরস্ত্রীকরণ করার আহ্বান জানাতে যাচ্ছে আরব দেশগুলো। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
শনিবার ফরাসি সাপ্তাহিক ল্য জার্নাল দ্যু দিমানশে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারো বলেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে এটিকে এগিয়ে নিয়েছে। এবারই প্রথম আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা করে তাদের নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলবে। এর ফলে হামাসের চূড়ান্ত বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত হবে।
বারো আরও বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরোপের আরও দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্ধেক ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে, বাকিরাও বিষয়টি বিবেচনা করছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন এবং জার্মানি ভবিষ্যতে বিষয়টি বিবেচনা করবে বলেও জানান বারো। নিউ ইয়র্কে আসন্ন জাতিসংঘ সম্মেলনে অন্যান্য দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি উচ্চাভিলাষী এবং কঠোর কূটনৈতিক পথরেখা চালু করতে চায় ফ্রান্স।
এর আগে বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এদিকে শনিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন না হওয়া পর্যন্ত স্বীকৃতি দেওয়া একটি অপ্রয়োজনীয় ও বিপরীতমুখী পদক্ষেপ।
শুক্রবার জার্মান সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা স্বল্পমেয়াদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা করছে না।
জাতিসংঘের সোমবার ও মঙ্গলবারের সম্মেলনে ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে যুদ্ধ-পরবর্তী এক পথনির্দেশনা তুলে ধরবে। এর লক্ষ্য থাকবে নিরাপত্তা, পুনর্গঠন এবং শাসনব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে পৌঁছানো। বারো জানান, এই রূপরেখা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় প্রণীত আব্রাহাম চুক্তির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় কমিশন আগামী সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেবে। এর আওতায় পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা বিতরণে সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে।
বারো ইউরোপীয় দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর আরোপিত আর্থিক অবরোধ তুলে নেয়। তিনি দাবি করেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২ বিলিয়ন ইউরো পাওনা, যা তারা এখনও পায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এই সংকটে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও সমাধানের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে নতুন কূটনৈতিক রূপরেখা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।