ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমাদ গালেব আল-রাহউই এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। শনিবার (৩০ আগস্ট) হুথি সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল-মাশাত জানিয়েছেন, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালালে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবারের এই হামলাকে হুথিদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করার প্রথম অভিযান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েল শুক্রবার বলেছিল, ওই বিমান হামলাটি ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। তবে মাশাতের বিবৃতিতে হুথি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিহতদের মধ্যে আছেন কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি।
আইডিএফ জানিয়েছে, সানা এলাকায় একটি বৈঠকে হামলা চালিয়ে রাহাউই এবং হুথিদের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের খতম করা হয়েছে।
২০১৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সানা থেকে উৎখাত করার পর থেকে হুথিরা ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, যা একটি বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের সূচনা করে। হুথিরা জানিয়েছে, রাহাউই কয়েকজন হুথি মন্ত্রীর সঙ্গে নিহত হয়েছেন। তবে অন্যদের নাম প্রকাশ করেনি।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-হাদাথের খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে হুথিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচারমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, সামাজিক বিষয়কমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রী রয়েছেন।
মাহদি আল-মাশাতের কার্যালয় জানিয়েছে, হামলায় আরও কয়েকজন মন্ত্রী মাঝারি ও গুরুতর আহত হয়েছেন। এতে আরও জানানো হয়েছে, হুথি উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ আহমেদ মিফতাহ রাহাউইয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আহমাদ গালেব আল-রাহউই এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে সরকারের প্রকৃত নেতা ছিলেন তার ডেপুটি মোহাম্মদ মিফতাহ। আল-রাহউইকে মূলত আন্দোলনের প্রতীকী নেতা হিসেবে দেখা হতো এবং সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মহলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। তিনি ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ’র মিত্র ছিলেন, যাকে ২০১৪ সালের শেষ দিকে হুথিরা সানা থেকে উৎখাত করে।
তখন থেকে ইয়েমেন সানা-ভিত্তিক হুথি প্রশাসন এবং এডেন-ভিত্তিক সৌদি-সমর্থিত সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে।
গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা আব্দুল-মালিক আল-হুথি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ বৃহস্পতিবারের ওই হামলায় হতাহতদের মধ্যে ছিলেন না।
আইডিএফ শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, বৈঠক সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছিল। তারা আরও জানিয়েছে, অভিযানের পূর্ণ প্রভাব এখনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
ইসরায়েল ও গাজায় হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুথিরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজকে টার্গেট করছে। তাদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব করছে। এর পাল্টা জবাবে ইসরায়েল হুথি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল হুথিদের আক্রমণ সীমিত করা।
গত এক বছরে, ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে হামাস এবং তাদের লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা ও কমান্ডারদের হত্যা করেছে, যা উভয় গোষ্ঠীকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ শনিবার বলেছেন, এই হামলা হুথিদের বিরুদ্ধে একটি ভয়াবহ আঘাত। তিনি হামলাকে ‘কেবল শুরু’ বলে উল্লেখ করেছেন।