নেপালে টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড় ধস ও আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের একাধিক জেলায় সেতু, সড়ক ও ঘরবাড়ি ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
নেপালের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র কালিদাস ধৌবোজি রবিবার জানান, ভারতের সীমান্তঘেঁষা পূর্বাঞ্চলীয় ইলাম জেলায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া বজ্রপাতে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
নেপালের জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র শান্তি মহাত জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান চলছে। টানা বৃষ্টিতে উদ্ধারকাজে সমস্যা হলেও সেনাবাহিনী ও পুলিশ একযোগে কাজ করছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোম ও মঙ্গলবার দেশজুড়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। জরুরি সেবা ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবে। সরকার বলেছে, আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর ১২টির বেশি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। বিভাগের প্রধান কমল রাম জোশি বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে এবং নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট-এর খবরে বলা হয়েছে, বাগমতী, গণ্ডকি, লুম্বিনি ও মদেশ প্রদেশে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। রাজধানী কাঠমান্ডুর কিছু অংশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পরিবহন অবকাঠামোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় ধসে কাঠমান্ডুর সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সব প্রধান সড়ক বন্ধ রয়েছে। কাঠমান্ডু-চীন সীমান্ত সংযোগকারী আরণিকো মহাসড়কের একাধিক অংশ ধসে পড়েছে। পূর্বাঞ্চলের বিপি মহাসড়ক ধ্বংসস্তূপে ঢেকে গেছে।
অপরদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শনিবার অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো আংশিকভাবে চালু থাকলেও বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের মুখপাত্র রিঞ্জি শেরপা।
প্রবল বর্ষণ এমন সময়ে এসেছে, যখন লক্ষাধিক মানুষ দেশজুড়ে দশাইন উৎসব শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন। দুই সপ্তাহব্যাপী এই ধর্মীয় উৎসবের প্রধান দিন ছিল বৃহস্পতিবার, যেদিন মানুষ গ্রামে পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের কোসি নদীতে। স্থানীয় কর্মকর্তা ধর্মেন্দ্র কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, নদীর পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় কোসি ব্যারাজের সব ৫৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ১০ থেকে ১২টি গেট খোলা হয়। নদীর সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল সীমিত করার বিষয়েও বিবেচনা চলছে। এই নদী প্রতিবছর ভারতের বিহার রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং পাহাড়ি এলাকায়ও টানা বৃষ্টিতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।