হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ গুরুত্ব দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া ঘিরে ইসরায়েলের তরফ থেকে এমন অভিযোগ উঠলে তার জবাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে মার্কিন প্রশাসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২৯ জন জিম্মির মধ্যে ৯ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বুধবার ফেরত আসা দুই মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তারা ছিলেন ২৭ বছর বয়সি ইনবার হায়মান এবং ৩৯ বছর বয়সি সার্জেন্ট মেজর মুহাম্মদ আল-আত্রেশ। হায়মান ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা উৎসবে হামাসের হামলায় নিহত হন এবং তার মরদেহ গাজায় নেওয়া হয়। একই দিনে যুদ্ধে নিহত হন আল-আত্রেশ।
মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল গাজায় প্রতিশ্রুত সাহায্যসামগ্রী সীমিত করেছে। তাদের অভিযোগ, মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে হামাস। তবে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দাবি, ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ফেরত পাঠানো কিছুটা সময়সাপেক্ষ কাজ।
তাদের সমর্থন দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনও বলেছে, হামাস চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না। বরং তারা সব জীবিত জিম্মি ফেরত দিয়েছে এবং নিহতদের দেহ উদ্ধারে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গাজায় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিরস্ত্রীকরণ ও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে।
হামাসের সামরিক শাখা থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা যে মরদেহগুলো উদ্ধার করতে পেরেছে সেগুলো ফেরত দিয়েছে, আর বাকিগুলো উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। একজন মার্কিন উপদেষ্টা বলেন, গাজার ব্যাপক ধ্বংসের কারণে সব দেহ উদ্ধারে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের তথ্যের বিনিময়ে পুরস্কার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং তুরস্কের বিশেষজ্ঞরাও এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেবেন।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাসকে তার চুক্তির দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নিহত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে হামাসকে ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দিতে হবে। এর বিপরীতে ইসরায়েল প্রতি নিহত ইসরায়েলির জন্য ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে—এ পর্যন্ত ৯০ জন ফিলিস্তিনির দেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ বলেছেন, হামাস যদি শান্তিচুক্তি পুরোপুরি কার্যকর না করে, তবে সেনাবাহিনীকে নতুন অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাজায় হামাসকে পরাজিত করার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য সেনাপর্যায়ের বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই নিহত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, আর ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজার সব সীমান্ত খুলে দিতে হবে, যেন হাজারো ট্রাক ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে, কারণ অনেকেই আশঙ্কা করছেন যুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে। খান ইউনিসের বাজারে নেভেন আল-মুগরাবি বলেন, প্রতিবার মনে হয় শান্তি ফিরছে, তখনই নতুন আতঙ্ক শুরু হয়। মানুষ এখন অতিরিক্ত খাবার মজুত করছে, কারণ কেউই বিশ্বাস করে না এই শান্তি টিকবে।