চারিদিকে হলুদে একাকার। মাঝ দিয়ে চলে গেছে মেঠো পথ। এই দৃশ্যের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়িয়েছে রাস্তার দুইদিকে নারকেল গাছের সারি। এমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দেখা মিলবে মেহেরপুর সদর উপজেলার ডাল ও তৈল ভিত্তি বীজ উৎপাদন খামার আমঝুপি বিএডিসি ফার্মে।
মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা প্রধান সড়কের ধারে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার। এই খামারে বিভিন্ন সবজীর বীজ উৎপাদনের জন্য ফসল চাষ করা হলেও প্রতিবছর সূর্যমুখীর চাষ ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। জানুয়ারির শুরুতে সূর্যমুখী ফুল ফুটলেই সেখানে ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী।
বিএডিসির আওতাধীন আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে চলতি মৌসুমে দুটি প্লটে সাড়ে ৭ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছে কর্তৃপক্ষ। বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষ করা হলেও প্রতিবছরই ফুলের সৌন্দরে্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে খামারটি। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে খামারে। দেশে বীজের চাহিদা পূরণ ও বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ ছড়িয়ে দিতে বারি-৩ জাতের সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে এই খামারে। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ করলে বীজ থেকে একই সঙ্গে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এ আবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সম্প্রসারণ করার জন্য বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।
আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দুটি প্লটে সাড়ে সাত একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সূর্যমুখী ফুলের ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। সুর্যমুখী শুধু একটি ফসলই নয় এর সৌন্দর্য মানুষ উপভোগ করে। এটি ব্যাপকভাবে চাষ হলে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ হবে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে হলদে সূর্যমুখী ফুলের চাদরে মোড়া। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বিএডিসি ফার্মে এখন শোভা পাচ্ছে ফুটন্ত ‘সূর্যমুখী’ ফুল। ফার্মের সূর্যমুখী ফুলের রাজ্যে প্রতিনিয়তই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমী। মনোরম সুন্দর পরিবেশ, শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করেত চাইছেন না প্রকৃতি প্রেমীরা। সেই সঙ্গে নানা বয়সী সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের সেলফি, গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলুদ রং ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।
সালমান ফারসী, রিংকি ওয়াফি, জারা ও ইউসুফ নামের কয়েকজন দর্শনার্থী জানায়, আমরা সুর্যমূখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি পরিবারের সকলকে নিয়ে। এটি একটি আবাদ হলেও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করেছে। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু হলুদ রংয়ের ফুল আর ফুল। প্রকৃতির সাথে হলুদ মিলে একাকার। এ যেন এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পারলাম। আমাদের কাছে ভালো লাগে তাই পরিবারকে নিয়ে হলুদের রাজ্যে আসা।
আমঝুপি ডাল ও তেল বীজ উৎপাদন খামার (বিএডিসি) উপ পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে বীজ থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। ৪ কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে ১ লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এছাড়া সূর্যমুখী বীজের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্য সম্মত। বিনোদনের জায়গা কম থাকায় এই বাগানটিতে প্রতিনিয়ত উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে দর্শনার্থীদের।