নির্বাচনের আর এক সপ্তাহ বাকী। শেষ সময়ে নির্বাচন থেকে একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে আগামী ২১ মে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুরুতে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৮ জন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ভোট যুদ্ধ শুরু করেন। প্রচার প্রচারণার মাঝ পথ থেকে একে একে নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার শুরু করেন। শেষ সময়ে গত দুই দিনে দুই জন হেবি ওয়েট প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এখন পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন যারা তা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল আলম (কাপ পিরিচ), গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন (মোটরসাইকেল), গাংনী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক লাইলা আরজুমান বানু (দোয়াত কলম)।
হঠাৎ করে প্রার্থীরা নির্বাচিত না করার ঘোষণায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত রবিবার লাইলা আরজুমান বানু, সোমবার মাশাররফ হোসেন এবং আজ মঙ্গলবার শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একে একে এভাবে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণ প্রর্থীরা ব্যাখ্যা করলেও সাধারণ ভোটারদের মাঝে তৈরী হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
শফিকুল আলম
নির্বাচনে সিন্ডিকেটের কারণ দেখিয়ে আগামী ২১ মে গাংনী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল আলম। নির্বাচনে শফিকুল আলমের পক্ষে যারা কাজ করেছেন, যারা সমর্থন দিয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে মঙ্গলবার (১৪ মে) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। আমি নির্বাচন থেকে সরে গেলেও আপনাদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছি না। আপনাদের সাথে আমার সম্পর্ক আগের মতই অটুট থাকেব।
তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচনে প্রচারণার শুরু হওয়ার পর লক্ষ্য করলাম নির্বাচনে প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে আমাকে যতটুকু লড়াই করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি লড়াই করতে হয়েছে একটি সিন্ডিকেটের সাথে। এটা খুব কঠিন। আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এটা ছিলো না যে আগে সিন্ডিকেটের সাথে লড়াই করে তারপর আমাকে প্রার্থীদের সাথে লড়াই করতে হবে। আমি অনুভব করলাম দুটো লড়াই এক সাথে চালিয়ে যাওয়া যাবে না। এজন্যই আমি ভোটের লড়াই থেকে সরে যাচ্ছি।
মোশারফ হোসেন
দলকে সুসংগঠিত করতে ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে আসন্ন গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান গাংনী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন। সোমবার (১৩ মে) তিনি তার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ ঘোষণা দেন। মোশারফ হোসেন জানান, তিনি বর্তমানে গাংনী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি। দলের স্বার্থে ও পারিবারিকভাবে আলোচনা করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেন। কোন দলীয় চাপে নয়, দলের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো।
লাইলা আরজুমান বানু
আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক এমপির পত্নী লাইলা আরজুমান বানু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। রবিবার (১২ মে) দুপুরে তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। দলীয় স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কারো চাপে নয়, পারিবারিকভাবে আলোচনা করে দলের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন তিনি। লাইলা আরজুমান বানুর স্বামী সাবেক এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, তিনি বর্তমানে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। স্ত্রী লাইলা আরজুমান বানু নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় স্বার্থ বজায় রাখতে নির্বাচন থেকে সরে আসায় শ্রেয় বলে তিনি মনে করেন। হঠাৎ করে প্রার্থীরা নির্বাচিত না করার ঘোষণায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এভাবে একে একে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণ প্রর্থীরা ব্যাখ্যা করলেও জনসাধারণের মাঝে তৈরী হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ১৪ প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মাঝে বুধবার (০২ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তানভীর হাসান রুমান প্রতীক বরাদ্দ করেন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থীর লড়াইয়ের কথা থাকলেও ইতোমধ্যে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জনসহ মোট ১১ প্রার্থী মাঠে লড়বেন।