বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি-মামুনুল হক

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড়
  • Update Time : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৯০ Time View
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি-মামুনুল হক
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি-মামুনুল হক

মেগা প্রকল্পের নামে শেখ হাসিনা মেগা মেগা প্রকল্পের নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা মেগা দুর্নীতি করে বাংলাদেশকে হোগলা করে ছেড়ে দিয়েছেন। পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক একথা বলেন।

রবিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পঞ্চগড় জেলা শাখার আয়োজিত নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসমাবেশে এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৬ বছর বাংলাদেশকে চুষে খেয়ে যা ছিলো। ১৬ টা লাগেজে করে নিয়ে বোনের সাথে হেলিকপ্টারে নরেন্দ্র মোদির ঘরে গিয়ে পড়েছেন। ১৯৭৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫০ ছিলো শেখ হাসিনার প্রতিশোধের রাজনীতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি আরেকটি দেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার শুধু বাংলাদেশের উপর প্রতিশোধ নেয় নি আওয়ামী লীগের উপরেও নিয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছিলেন পচাঁত্তরে আপনারা কোথায় ছিলেন। তিনি একবারও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কথা ভাবেন নি। পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার মতো একজন প্রতিশোধ পরায়ন সাইকোপ্যাথ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীকে বছরের পর বছর মানুষের কাঁঠের উপর বসিয়ে শাসন করার ব্যবস্থা করেছেন শুধু এই কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় কেনা জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হেলিকপ্টার থেকে আকাশ থেকে গুলি করেছে। হাতুড়ি লীগ, হেলমেট লীগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্রদের হত্যা করেছে। তিন বছরের শিশু পর্যন্ত বাবার কোলে থেকেও ঘরে মধ্যে রেহাই পায়নি। সহস্রাধিক প্রাণকে হত্যা করেও শেখ হাসিনার তৃষ্ণা মেটেনি। সে লক্ষ্য মানুষকে হত্যা করবে তাও মসনদ ছাড়বেনা।

মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক দর্শন। তার যে রাজনৈতিক যে কলাকুশল। সেটাকে এ্যানালাইসিস করলে দেখা যায়। শেখ হাসিনার দুইটি মুল দর্শন ছিল। তার প্রথম দর্শন ছিলো প্রতিরোধের রাজনীতি। ১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ সালের মধ্যে যে বাকশালের দ্বারা নিগৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চাইতে ৭১ সাল থেকে ৭৫ সালে বেশি যুবক মারা গেছে। সেই বাকশালের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদেই সংঘঠিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালের গণঅভ্যুত্থান। কিন্তু ৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তৈরী করা হয়েছিল। সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে ৭১ খেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ৫০ বছর এক আগস্ট নিয়ে পড়ে থাকলেন।

তার বাপ ভাইয়ের রক্তের দাম আছে অন্যদের বাপ ভাইয়ের রক্তের কোন দাম নেই। ৭৫ সাল থেকে ২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি। এই প্রতিশোধ তিনি কার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।

এই জাতি যে কোনদিন বিশ্বের দরবারে যেন কোনদিন মাথা উচু করে দাড়াতে না পারে। তার সমস্ত আয়োজন তিনি সম্পন্ন করেছিলেন। এই দেশকে তিনি স্বাধীন দেশ রাখতে চাননি। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি অন্য দেশের তিলকওয়ালী মুখ্য মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। আর এই জন্য তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতির ভীতকে ধসিয়ে দিয়ে এই স্বাধীন দেশ এবং জাতিকে একটি পরনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এই দেশে শেখ হাসিনা নেই কিন্তু তার দোষরেরা এখনো এদেশেই আছে। শেখ হাসিনার পেত্মারা আগস্ট বিপ্লবকে কেউ ছিনতাই করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা হয়েছিল কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন তৈরি হবে না তার ভিত্তিতে কিন্তু আমরা দেখলাম বিজয়ের পরে সাত কোটি মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্খাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাহাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের উপর একটি সংবিধান চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাহাত্তরের এই চেতনার মাধ্যমে একাত্তরের চেতনাকে হাইজাক করা হয়েছিল। একাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত ৩০ হাজার যুবককে হত্যা করেছে বাকশালীরা। এক তরফা নির্বাচন করে বাংলাদেশের জনগণের

অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিনদেশি কোন এক রাষ্ট্রের আশীর্বাদে ও সমর্থনে বাংলার মসনদকে দখল করে রাখার জন্য অসংখ্য বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও হত্যা করেছে। জুলাই থেকে আগস্টে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেও শেখ হাসিনার রক্ত তৃষ্ণা মেটেনি। তিনি প্রয়োজনে লাখো মানুষ হত্যা করেও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ছিলো শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নাটক। এখন বাংলাদেশ সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিমদের প্রধান দায়িত্ব হলো দুর্গা পূজা সহ সব সময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়া। আগস্ট বিপ্লবের ফসল হবে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশে ইসলামের বিপ্লব,আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ, খেলাফতের বাংলাদেশ। ছাত্র জনতা রাজপথে থাকবে কেউ আগস্ট বিপ্লবকে ছিনতাই করতে চাইলে আমরা রুখে দাঁড়াবো।

মামুনুল হক বলেন, আমাদের অসংখ্য ভাইয়ের কাদিয়ানীদের মিথ্যা মামলা শিকার। দয়া করে ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা অন্য সকল মিথ্যা মামলার আগে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের দ্বারা দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ দাবী জানাচ্ছি এবং আমি আপনাদের সকলকে বলছি আমাদের নির্দেশনা বাইরে গিয়ে কখনো আপনারা উত্তেজিত হবেন না। এই দেশ আমাদের। আমরা এই দেশে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকি নাকি বাড়ি ওয়ালা হিসেবে থাকি। কাজেরই ভাড়াটিয়ারা যে কোন যে কোন জায়গায় গন্ডগোল লাগিয়ে পরের দিন অন্য জায়গায় চলে যায়। কাজেই বাড়িওয়ালা যেমন তৎপর হয় ভাড়াটিয়ারা তেমন তৎপর হয়না। কাজেই আমাদের শান্তি শৃংখলা রক্ষা করে চলতে হবে। সংখ্যালঘুদের জানমাল ও ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের দরবারে দেখায় দিতে হবে বাংলাদেশের মুসলমানেরা সাম্প্রদায়িক নয়, সংঘাতপূর্ণ নয়, ইসলামের উদার নীতিতে বিশ্বাসী। কাজেই আমরা কাদিয়ানীদের একমাস সময় দিলাম। একমাসের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আর যদি তা না করা হয় তাহলে আমার ভাইদের রক্ষার করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

এসময় তিনি বলেন, যে দেশের মায়েরা যে জাতির মায়েরা সন্তানদেরকে আদর করে সোহাগ করে নিজের হাতে ধরে রাজপথে এনে দেশের জন্য জনগণের জন্য উৎসর্গ করে বলেছিলেন, তোমার আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের মুক্তি মিলবে। সেলুট জানাই সে সকল মায়েদেরকে। যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারী মুক্ত করার লক্ষ্যে নিজের কলিজার টুকরা বুকের ধনকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। মায়ের সন্তানকে মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে দিনদানখানায় পাঠায় রিমান্ডে অকথ্য নির্যাতন করে। সেই মা সন্তানের পিঠ চাপড়ে বলে সাহস ধরে রেখো। অন্যায়ের সামনে মাথা নত করো। যেই দেশের মায়েরা সন্তানদেরকে এভাবে উদ্ভুদ্ধ করতে পারে। প্রেরণা যোগাতে পারে। সেই জাতি কখনো পরাজয় বরণ করতে পারেনা।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা পাশের দেশেরই রয়েছেন। যে কোন সময় নাকি দেশে ঢুকে যেতে পারেন। আমরাও চাই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মাধ্যেমে বিচার করা হোক। তিনি সব সময় সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিশৃংখলা করেন। রাতের বেলা নাগিন হয়ে সংখ্যালঘুদের দংশন করেন। আর দিনের বেলা গিয়ে ওঝা হয়ে সেই বিষ ঝাঁড়েন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মীর মোর্শেদ তুহিনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জালালুদ্দিন, মাহবুবুল হক, সদস্য সচিব আবু সাইদ নোমান, বায়তুল মাল সম্পাদক ফজলুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো আব্দুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin