বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

মেহেরপুরে লতি কচুর চাষে ভাগ্য ঘুরেছে কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • Update Time : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৭ Time View
মেহেরপুরে লতি কচুর চাষে ভাগ্য ঘুরেছে কৃষকের
মেহেরপুরে লতি কচুর চাষে ভাগ্য ঘুরেছে কৃষকের

২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কন্দাল জাতের লতি কচু চাষ শুরু হয়। পরীক্ষামুলক চাষ করে লাভবান হওয়ায় এখন অনেক কৃষক বাণিজ্যিক চাষ করেছেন। পতিত ও অনাবাদি জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। শুধু লতি নয়, কচুর ফুল এবং কন্দ সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি হিসেবে চাহিদা এখন দেশজুড়ে। একই গাছ থেকে লতি, ফুল ও কন্দ বিক্রি করতে পারাই অল্প খরচে বেশি লাভ। ফলে লতি কচুর চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক।

কৃষি বিভাগ বলছেন, অনাবাদী পতিত ও স্যৎসেতে জমিতে অন্য আবাদ না হওয়ায় লতিকচুর ফলন ভাল হচ্ছে। অনেক কৃষক বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করেছেন। চাষ পদ্ধতি জানাতে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছে আগ্রহী কৃষকদের।

মেহেরপুর জেলা শহরের দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া ২৪ কাঠা অনাবাদী জমিতে লতি কচুর চাষ করেছেন। চারা রোপনের তিন মাস পর লতি বিক্রি শুরু করেছেন। লতি বিক্রির পাশাপাশি ফুল বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। লতিকচু চাষি বাবু মিয়া জানান-কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ২০২১ সালে ১০ কাঠা জমিতে লতিকচুর চাষ করে ভাল ফলন দাম পেয়ে খরচের দ্বিগুণ টাকা আয় করেন।

এবছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে লতি কচু আবাদ করেছেন। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পর পর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পর পর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। ইতোমধ্যে তিনি ৬০ হাজার টাকার লতি ও ফুল বিক্রি করেছেন। আরও ৬০ হাজার টাকার বিক্রির আশা করছেন তিনি। লতিকচু চাষে জমিতে সবসময় পানি দিয়ে জমি স্যাসস্যাতে করে রাখতে হয়। গোলাম হোসেন নামের এক চাষি বলেন, লতি কচু একবার লাগালে মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই লতিকচুর চাষ করছেন।

সবজি বিক্রেতা আনিসুর রহমান জানান- বাজারে প্রতি কেজি লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। লতি কচুর পাইকারী ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়ৎদার সামাদ আলী, রাজ্জাক, ইনতাজ বলেন- লতি কচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।

কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জানান-মেহেরপুরে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতি কচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করেন। লতিকচু চাষে এ সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাতস্যাতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘণ করে লাগাতে হয়। এবং সবসময় জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন। যাতে লতি ও ফুল বেশী হয়। কারণ লতি ও ফুল উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয়। জেলায় এবছর ১৫ হেক্টর জমিতে লতি কচুর আবাদ হয়েছে। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারছেন। তবে স্বল্প সময়,কম খরচে লাভ বেশি পাওয়ায় লতিকচুর চাষ দিনিদিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin