শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো মিয়ানমার জান্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ১৫ Time View
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো মিয়ানমার জান্তা
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো মিয়ানমার জান্তা

আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এখনও থাকছেন সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তা বাতিল এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশে একটি নতুন বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন তদারকি করবে।

তবে জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপে মিয়ানমারে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায় কোনও পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায়নি। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের হোতা মিন অং হ্লাইং কার্যত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে সর্বময় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। কারণ, তিনি একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের দায়িত্বেও বহাল রয়েছেন।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুন বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে জারি থাকা জরুরি অবস্থার মেয়াদ সাত দফা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এদিন জান্তা সরকার জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচন আয়োজন ও প্রস্তুতি নেওয়ার সময়।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত বেসামরিক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলে আসছে। সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী দমনে রক্তক্ষয়ী অভিযান পরিচালনা করছে।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনী ৬ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ইচ্ছামতো আটক করেছে বলে দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়াও দেশটিতে বিচারিক মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানুয়ারিতে প্রকাশিত অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্যাতনের অভিযোগগুলো ‘পশ্চিমা ভুয়া তথ্য’ হিসেবে অস্বীকার করেছে।

মিয়ানমার বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে ২০২১ সালে আউং সান সু চির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে। এই অভ্যুত্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে সামরিক বাহিনী বিদ্রোহ দমনে লড়াই করছে এবং ব্যাপক নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যা তারা অস্বীকার করে।

এই নির্বাচন পশ্চিমা দেশগুলো প্রহসন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যা জেনারেলদের ক্ষমতা সংহত করার একটি মাধ্যম বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি হিসাবে অংশ নেওয়া প্রার্থীরাই প্রাধান্য পাবে এবং বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ নির্বাচনে হয় নিষিদ্ধ, নয়তো তারা অংশ নেবে না।

মিয়ানমার পরিস্থিতি বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেছেন, মিয়ানমারে ক্ষমতার এই পরিবর্তন কেবলই নামমাত্র এবং লোক-দেখানো। যারা আগে ক্ষমতায় ছিলেন, তারাই থাকবেন এবং আগের মতো দমন-পীড়ন চালাবেন। তিনি বলেন, ‘তারা কেবল পুরোনো মুখগুলোকেই নতুন সাজে উপস্থাপন করছে। জলদি কোনও পরিবর্তন আসবে না। তবে এটি সেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ, যার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না।’

সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের অভ্যুত্থানকে ‘প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, কারণ তারা বলছে, অভ্যুত্থানের তিন মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছিল, যেখানে সু চির (বর্তমানে বিলুপ্ত) শাসক দল নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করেছিল।

তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলেছে, এমন কোনও জালিয়াতির প্রমাণ তারা পায়নি যা নির্বাচনের ফল পরিবর্তন করতে পারত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin